জাকাত ইসলামের মূল ভিতের অন্যতম একটি

0

জাকাত ইসলামের মূল ভিতের অন্যতম একটি। এটি আবশ্যকীয় আর্থিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘জাকাত শরিয়তের এমন একটি অকাট্য বিধান, যা সম্পর্কে দলিল-প্রমাণের আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। জাকাতসংক্রান্ত কিছু মাসআলায় ইমামদের মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও মূল বিষয়ে অর্থাৎ জাকাত ফরজ হওয়া সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই।

জাকাতের ফরজিয়তকে (আবশ্যকীয়তাকে) যে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়।’
(ফাতহুল বারি ৩/৩০৯)

তাই কোরআন মাজিদের একাধিক জায়গায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে জাকাত আদায়ে আদেশ করা হয়েছে এবং আদেশ পালনকারীদের জন্য অফুরন্ত পুরস্কার, মহা প্রতিদান ও আত্মশুদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যারা একনিষ্ঠভাবে জাকাত আদায় করে নিম্নে কোরআন-হাদিস থেকে তাদের ব্যাপারে ১০টি পুরস্কারের কথা তুলে ধরা হলো—
আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার

শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা জাকাত আদায় করে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার। যারা বিশেষ এই পুরস্কারে ভূষিত হবে তারাই তো আখিরাতে সফলকাম হবে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয়, আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দেব।’
(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৬২)

জাকাত আদায় প্রকৃত মুমিনের কাজ

মুমিনরাই জাকাত দেয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই (প্রকৃত মুমিন) আল্লাহকে ভয়কারী।’

(সুরা : বাকারা,আয়াত : ১৭৭)

এক বর্ণনায় নবী করিম (সা.) জাকাতকে দলিল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নামাজ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি।

সদকা তথা জাকাত হচ্ছে দলিল। ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতির্ময়।
(মুসলিম, হাদিস : ৪২২)

অর্থাৎ জাকাত হলো দাতার দৃঢ় ও মজবুত ঈমানের পরিচয় ও নিদর্শন। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের স্বীকারোক্তি ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। সম্পদের মায়া ত্যাগ করে খুশি মনে দান করা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের আলামত।

অন্তরের আত্মশুদ্ধি

জাকাত আদায়ের আরেকটি সুফল বা উপকারিতা হচ্ছে অন্তরের আত্মশুদ্ধি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী, আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে দেবেন এবং তাদের জন্য দোয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তি। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’

(সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৩)

এখানে পবিত্র করার ব্যাখ্যা হচ্ছে, কৃপণতা, দুনিয়ার আসক্তি ও ধন-সম্পদের মোহ থেকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা। সারা জীবন শুধু সম্পদ অর্জনের পেছনে ব্যয় করা থেকে নিজেকে সামান্য অব্যাহতি দেওয়া।

ধন-সম্পদে পবিত্রতা ও বরকত লাভ

জাকাত অর্থ পবিত্র করা। যেহেতু এটি মানুষের ধন-সম্পদকে পবিত্র ও বরকতময় করে তোলে, তাই একে ইসলামী পরিভাষায় জাকাত বলা হয়। মুসনাদে আহমদের বর্ণনা, আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি সম্পদশালী ও আমার আত্মীয়-স্বজনও অনেক। আর আমি শহরে বাস করি। আমাকে বলুন, কিভাবে নিজের সম্পদ ব্যয় করব? তিনি বলেন, জাকাত আদায় করবে। কারণ জাকাত হলো সম্পদের পবিত্রতা, তা তোমাকে পবিত্র করবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে। অসহায়, মিসকিন, প্রতিবেশী ও অভাবীদের হকের প্রতি লক্ষ রাখবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৩৯৪)

জাকাত আদায়কারী মুমিনের বন্ধু

মানুষের প্রকৃত বন্ধু কারা—এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং মুমিনরা, যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং বিনম্র।’

(সুরা : মায়িদা,আয়াত : ৫৫)

মসজিদ আবাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত

যারা জাকাত আদায় করবে তাদের মসজিদ আবাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা ঈমান এনেছে,আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামাজ ও আদায় করে জাকাত। আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’

(সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)

জাকাত আদায়ে সফলতার ঘোষণা

এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এসব লোকই তাদের রবের পক্ষ থেকে আসা হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম, যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আখিরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।’

(সুরা : লুকমান,আয়াত : ৪)

দ্বিনের মৌলিক পরিচয় বহনকারী

জাকাত আদায়কারীদের জন্য আরো একটি সুফল হলো তারা দ্বিনের মৌলিক পরিচয় বহনকারী। পৃথিবীতে এ পরিচয় বহন করা সৌভাগ্যের লক্ষণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সুরা : বাইয়েনা, আয়াত : ৫)

আখিরাতে চিন্তামুক্তির ঘোষণা

আখিরাতে চিন্তামুক্ত থাকতে চাইলে যথাসময়ে জাকাত দিতে হবে, অন্যথায় সুফলের পরিবর্তে কুফল বয়ে আনবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা নামাজ আদায় করে এবং জাকাত দেয়, তারাই আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী; তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে আছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৪-৫)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘যারা ঈমান আনে, সত্কর্ম করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৭)

জান্নাত লাভের ঘোষণা

আবু মালেক আল আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে এমন সব (মসৃণ) ঘর রয়েছে, যার বাইরের জিনিসগুলো ভেতর থেকে এবং ভেতরের জিনিসগুলো বাইর থেকে দেখা যায়। সেসব ঘর আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন যে ব্যক্তি (মানুষের সঙ্গে) নম্রতার সঙ্গে কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করে (জাকাত আদায় করে), পর পর রোজা রাখে এবং রাতে নামাজ আদায় করে অথচ মানুষ তখন ঘুমিয়ে থাকে।

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.