শিশুর কাশি মানেই নিউমোনিয়া নয়

1

অনেক শিশুই এ সময় কাশিতে ভুগছে। মা-বাবারাও উদ্বিগ্ন হয়ে এ কাশিকে নিউমোনিয়া মনে করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াচ্ছেন। অথচ এসব কাশির বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত, তাই এসবে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। ভাইরাসজনিত এ রোগটির নাম হচ্ছে ব্রঙ্কিওলাইটিস। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শিশুদের নিউমোনিয়ার (১১ শতাংশ) চেয়ে ব্রঙ্কিওলাইটিসই (২১ শতাংশ) বেশি হয়।

ব্রঙ্কিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় শ্বাসতন্ত্রের দুটি সম্পূর্ণ পৃথক স্থান আক্রান্ত হয়। ধরা যাক, আমাদের শ্বাসনালি একটি উল্টানো গাছ। গাছের কাণ্ড থেকে শাখা-প্রশাখা বিস্তারিত হয়ে পাতায় শেষ হয়। পাতার বোঁটায় (অর্থাৎ ব্রঙ্কিউলে) ভাইরাসের কারণে প্রদাহ হলে তাকে বলে ব্রঙ্কিওলাইটিস। পাতায় (অর্থাৎ এলভিওলাইয়ে) প্রদাহ হলে বলে নিউমোনিয়া।

দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ব্রঙ্কিওলাইটিস বেশি হয়। এ রোগে নাক দিয়ে পানি পড়ার সঙ্গে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে, জ্বরের মাত্রা কম থাকে, বুকে বাঁশির মতো আওয়াজ হয়। পক্ষান্তরে নিউমোনিয়া যে কোনো বয়সে হতে পারে। শিশুর খুব জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। অসুস্থতা চেহারায় প্রতিফলিত হয়। বুকের এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষায় অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়।

চিকিৎসা: এ রোগে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল আর নাক বন্ধ হয়ে গেলে নরমাল স্যালাইন (লবণপানি) ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। শ্বাসকষ্ট খুব বেশি হলে হাসপাতালে নিতে হয়। হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি নিশ্চিত করা গেলে এবং সেইসঙ্গে তিন শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড দিয়ে নেবুলাইজ করলে বেশিরভাগ শিশুই ভালো হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সালবিউটামল বা স্টেরয়েড দিলে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না।

প্রতিরোধ: সুস্থ শিশুদের ব্রঙ্কিওলাইটিসে আক্রান্ত শিশু থেকে দূরে রাখুন। শিশুকে সিগারেট, মশার কয়েল ও রান্নাঘরের ধোঁয়ার কাছে নেবেন না। শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুলে এবং সেইসঙ্গে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ নিশ্চিত করা গেলে এ রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

লেখক: ডা. আবু সাঈদ শিমুল
কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

সূত্র: সমকাল।

1 Comment

  1. Pingback: শিশুর কাশি মানেই নিউমোনিয়া নয় - BD24Time

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.