মোঃ আয়ুব হোসেন পক্ষী, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ করোনাভাইরাসকে বিশ্বে মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সেই সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের দেশকে লকডাউন ঘোষণা করেছে। তারই সুত্র ধরে করোনার সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আর এই ঘোষণার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আস্থা রেখে কার্যত সারা দেশের ন্যায় যশোরের শার্শার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও নিজেদেরকে গৃহবন্দি করে ফেলেছেন। ছুটি ঘোষণার পর থেকেই হঠাৎ যেন নেতাশূন্য হয়ে গেছে পুরো শার্শা উপজেলা। কোথাও কোনো নেতার আনাগোনা চোখে পড়ছে না। যেসব নেতাদের বড় বড় পোস্টারে ছেয়ে রয়েছে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’পাশ জুড়ে। যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হলে সামনের কাতারে থাকতো তাদের আজ দেশের ক্রান্তিলগ্নে পাশে না পাওয়ায়, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শার্শার সাধারণ জনগণ।
আর এ নিয়ে সর্বদা চুল চেরা বিশ্লেষণ চলছে স্যোশাল মিডিয়ায়। কয়েকজন নেতা বা বিভিন্ন সংগঠন থেকে গরিবদেরকে সাহায্য দেওয়া হলেও, সেলফির ভিড়ে তা যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এসব দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের এই অবস্থায় দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করবে এমন নেতার যেন বড়ই অভাব পড়েছে শার্শা উপজেলায়।
অনেকে বিদ্রুপ করে স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন, ‘অমুক ভাই, তমুক ভাই, তাদের এখন দেখা নাই’। ‘কোথায় গেল রাস্তার দু‘ধারে পোস্টার লাগানো নেতারা’। ‘করোনার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে নেতারা’। এ রকম অনেক পোস্ট করছেন তারা।
তবে দেশের এই সাময়িক দুর্দিনে কিছু নেতা অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম । শার্শা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান নিজ অর্থায়নে ব্লিচিং পাউডার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেন ৷ উপজেলার পুটখালীর ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার হাদিউজ্জামান নিজ উদ্যোগে শুক্রবার থেকে অসহায় দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করছেন ৷ কায়বা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফিরোজ হাসান টিংকু ও বাগআঁচড়া ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস কবির বকুল চেষ্টা করেছেন খাদ্য সামগ্রী দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ৷ রবিবার ৩০শে মার্চ এমপি আফিল উদ্দিনের পক্ষ থেকে ১২৫ কেজি করে ব্লিচিং পাউডার ১১টি ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌরসভা সহ ১২ টি এলাকায় দেয়া হয়।
নাম উল্লেখ না করা শর্তে, একজন শিক্ষক বলেন, উপজেলার জনগোষ্ঠী অনুযায়ী এসব নেতাদের সামান্য সাহায্য দিয়ে কি আর এত জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ হয়।
দিন মজুর, ভ্যানচালক, তারা তো এখন ভ্যান চালাতেও পারছে না। কাজও করতে পারছে না। তাই তাদেরকে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার আহ্বান জানান অনেকে।
তবে আশার আলো এই, ‘ঘরে থাকার তৃতীয় দিনে’ যশোরের শার্শা উপজেলার এক হাজার দুস্থ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদান পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় এক হাজার দুস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে ট্যাগ কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে এটি তদারকি করা হচ্ছে।
প্রতিটি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, দুই কেজি আলু ও একটা সাবান রয়েছে।
করোনাভাইরাসের জন্য সরকারি অনুদান প্রতিটি ইউনিয়নের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এরিয়া ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র মন্ডল ট্যাগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, বাগআঁচড়া ইউনিয়নে ৮০টি পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কটি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পৌঁছে দেওয়া হবে।
বেনাপোলে বাস চালক জাহাঙ্গীর বলেন আজ ৫দিন গাড়ি বন্ধ ,সংসারের খুব করুণ দশা, এখনো পর্যন্ত কোন স্থান থেকে খাদ্য সামগ্রী পাই নাই৷
বাগআঁচড়ার তাছলিমা খাতুন (৪৫) বলেন, আমাদের কোনো জায়গা জমি নেই, হোটেলে কাজ করে সংসার চালাই। এখন হোটেল বন্ধ তাই না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় নেই। সরকারি এই অনুদান পেয়ে আমরা খুব খুশি।
ভ্যান চালক আজিজ (৫০) বলেন, এখন ভ্যান চালাতি পারছি নে, আয় রোজগার নেই। প্রধানমন্ত্রীর এই অনুদান আমার জন্যি আর্শিবাদ। অন্তত ছেলেপিলে নিয়ে দু‘মুঠো খাওয়ার ব্যবস্থা হলো।
চায়ের দোকানদার মহাসিন (৪০) বলেন, ভোটের আগে নেতাদের দৌঁড়ঝাপ দেখা যায়। এখন না খেয়ে আছি, কেউ খোঁজ খবরও নিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পাওয়ায় না খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবো।
বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে ৷ নিজ উদ্যোগে হতদরিদ্র ও অসহায়দের মাঝে খাদ্য সামগ্রী সল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয়া হবে ৷
শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বলেন শেখ আফিল উদ্দিন এমপির নির্দেশে অসহায় এবং হতদরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য বেনাপোলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে৷ খুবই দ্রুততার সাথে প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসহায় দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে।