জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী’র লুটপাটের ফন্দি, কাজ না করেই বিল উত্তোলন

0

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দৃষ্টি নন্দন পুকুর ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পের নামে কাজ না করেই ১৮ লক্ষ টাকা লুটপাটের ফন্দি তৈরী করেছেন উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রকাশ কান্তি রায়। প্রকল্পের ২০ ভাগ নির্মাণ কাজের বিপরীতে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকার মধ্যে ১৮ লক্ষ টাকার বিল-ভাউচার দাখিল করে ঠিকাদারের কাছে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই টাকা উত্তোলনে ঠিকাদারকে সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। সেই সুবিধার টাকা বৈধ করতে তিনি এখন চিঠি-পত্র চালাচালি করে ফন্দি তৈরী করছেন প্রকল্পটি যেন এখানেই শেষ হয়ে যায়। নিম্নমানের কাজ ও অপরিকল্পিত ভাবে বোমা মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করায় সামান্য বৃষ্টিতেই ভেঙ্গে গেছে পুকুরের পাড়।

অভিযোগ রয়েছে, বিলুপ্ত ছিটমহল গুলোতে নলকুপ ও স্যানিটেশন প্রকল্পে নানা অনিয়মের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করেছেন হাতীবান্ধা উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রকাশ কান্তি রায়। এ ছাড়া নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনিয়মের প্রাথমিক তথ্য পাওয়ায় ইতোমধ্যে ওই সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর চাকুরী সংক্রান্ত একটি ফাইল আটক করে দিয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনুদ্দিন।

জানা গেছে, ওই উপজেলার ডাকবাংলোর পাশে জেলা পরিষদের একটি পুকুর খনন করে দৃষ্টি নন্দন পুকুর তৈরীর পাশাপাশি ওই এলাকায় বসত বাড়িতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহন করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২৫ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩ শত ৯০ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান শহিদ ব্রাদার্স নামে ঢাকা মতিঝিল এলাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ক্রয় করে নেয় শরিফুল হক শাকিল নামে লালমনিরহাটের এক ঠিকাদার। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১৮০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার নিয়ম থাকলেও গত ১ বছরেও কাজের ২০ ভাগ শেষ করতে পারে নাই ঠিকাদার। অথচ ২০ ভাগ নির্মাণ কাজের বিপরীতে প্রায় ২৬ লক্ষ মোট টাকার মধ্যে ১৮ লক্ষ টাকার বিল-ভাউচার দাখিল করে উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদার। এ দিকে নি¤œ মানের কাজ ও অপরিকল্পিত ভাবে বোমা মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করায় সামন্য বৃষ্টিতেই ভেঙ্গে গেছে পুকুরের পাড়।

দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী যতটুকু কাজ হবে ততটুকু কাজের বিল দিবেন জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রকাশ কান্তি রায় সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ১৮ লক্ষ টাকার বিল দিয়ে দিয়েছেন ওই ঠিকাদারকে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার শরিফুল হক শাকিল জানান, বিভিন্ন কারণে কাজটি সঠিক সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে দুই এক দিনের মধ্যে আবারো কাজ শুরু হবে। তবে সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রকাশ কান্তি রায় বললেন ভিন্ন কথা। তার দাবী, এ প্রকল্পের সফলতা দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া এই প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ নেই। তাই মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যতটুকু হয়েছে সেখানেই শেষ। ২০ ভাগ নির্মাণ কাজ হয়েছে কিন্তু ১৮ লক্ষ টাকার বিল দিলেন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রকাশ কান্তি রায় বলেন, ঠিকাদার টাকা পেয়ে যে কাজ করবে না তা ধারণাই ছিলো না আমার।

লালমনিরহাট জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনুদ্দিন জানান, সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রকাশ কান্তি রায় যে তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি। কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। অতিরিক্ত বিল দেয়ায় ওই সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর চাকুরী সংক্রান্ত একটি ফাইল আটক করে দেয়া হয়েছে।

হাতীবান্ধার ইউএনও সামিউল আমিন জানান, দীর্ঘ দিনেও ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি দুঃখ জনক। আমি উচ্চ পর্যায়ে পত্র দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধও করেছি।

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.