দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আজ কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি

0

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে নতুন করে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেবে বিএনপি। আজ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে ১৫ দিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। এরমধ্যে কেরোসিন, ডিজেল ও এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে সরকার। এ সিদ্ধান্তের এ ছাড়া দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে এ সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিভিন্ন খাতের উৎপাদনসহ অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হবে। দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন এ তথ্য।

নেতারা জানান, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে মানুষের লড়াই অব্যাহত আছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় কঠিন থেকে আরও কঠিন হয়ে উঠছে সেই লড়াই। এর মধ্যে সরকার কেরোসিন, ডিজেল ও এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে নতুন করে সংকটে পড়েছে মানুষ। দেশজুড়ে চলছে অঘোষিত পরিবহণ ধর্মঘট। বিএনপিও সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মসূচি দেবে। রোববার (আজ) তা ঘোষণা করা হতে পারে।

 বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকার নিজেদের লোকজনের পকেট ভারি, ব্যবসা বৃদ্ধি, বাড়তি মুনাফার জন্য কেরোসিন, ডিজেল, এলপি গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এসবের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। মানুষ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে আগে থেকেই হিমশিম অবস্থায় ছিল। সাধারণ মানুষের ওপর এই নির্যাতন আরও বাড়িয়ে দেওয়া হলো। বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, জনগণের দল। তাই সরকারের এসব গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি দেব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের যাতায়াত খরচ, কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সব পণ্যের পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে দামে। আমাদের প্রশ্ন হলো, বিশ্ববাজারে জ্বালানির যখন দাম কম ছিল, তখন তো দাম কমানো হয়নি। তাহলে এখন বাড়ানো হলো কেন?

তিনি বলেন, এই সরকার যতদিন থাকবে ততদিন কোনো কিছুই ঠিকমতো চলবে না। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলে দেশবাসী তাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাবে। আর এজন্যই আমরা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি দীর্ঘদিন থেকে রাজপথের আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দলের প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরেও কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যায়নি। এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পর অনিয়মের অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত নীরব বিএনপি। এ অবস্থায় এখন দল পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগ তাদের। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর মধ্যে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দিয়ে আপাতত মাঠে থাকতে চায় বিএনপি।

সূত্র জানায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও কেরোসিন, ডিজেল, এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কয়েকজন সিনিয়র নেতা হরতালের মতো বড় কর্মসূচির দেওয়ার পরামর্শও দেন। তবে এখনই এ ধরনের কর্মসূচি না দেওয়ার পক্ষে বেশিরভাগ নেতা। তাদের যুক্তি, হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হলে এ সুযোগ নিয়ে ‘তৃতীয় পক্ষ’ কোনো বিচ্ছৃঙ্খলা করতে পারে। এতে করে সরকারও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সুযোগ পাবে।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, সাধারণ মানুষ আর ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচি চায় না। তবে অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চায়। জনগণ যাতে সম্পৃক্ত হয় ধারাবাহিকভাবে তেমন কর্মসূচি দেওয়া হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। এর মধ্যেই তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি জনগণের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এসব ইস্যুতে কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। আবারও নতুন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হবে।

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.