সবুজের খোঁজে লোকালয় ছেড়ে দূরে অপরূপ সৌন্দর্যের আধার নিঝুম দ্বীপ। নানা বৈচিত্র্যে ভরপুর এ দ্বীপ দেশের অন্যতম ভ্রমণকেন্দ্র।
সদরঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ সরাসরি যাওয়ার কোনো লঞ্চ নেই বিধায় প্রথমে হাতিয়ায় যেতে হয় সবমিলিয়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা যাত্রাপথ ।
কয়েক জন মিলে গ্রুপ করে যাওয়ার মজাই আলাদা,রাতভর আড্ডা আর গানে সময়টা বেশ উপভোগ্য হয়। মাঝে মনপুরায় যাত্রাবিরতি ভালোই লাগে।
সকালের নাশতা শেষে ট্রলারে করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা বেশ রোমাঞ্চকর।ঘাট থেকে নেমে একপলকে দ্বীপটি দেখে নিঝুম দ্বীপ নিয়ে যে কল্পচিত্র, তা মেলাতে সামনে যাত্রা।
সারি সারি কেওড়াগাছ রাস্তার পাশ দিয়ে চলে গেছে আরো গভীরে। একটু এগিয়ে গেলে কেওড়ার বন হালকা হতে থাকে। এরপর আবার শূন্য প্রান্তর। রাস্তার দু’ধারে শস্যক্ষেত। বন উজাড় করে গড়ে উঠেছে বসতি। বসতির ফাঁকে ছোট ছোট কেওড়া বৃক্ষ জানান দিচ্ছিল- ‘একদা এখানেও ঘন বন ছিল’।
নিঝুমদ্বীপ নামটি এলো যেভাবে,নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। ২০১৩ সালে দ্বীপটি জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র ইউনিয়নের মর্যাদা লাভ করে। দ্বীপের পূর্ব নাম ‘চর ওসমান’, ওসমান নামের একজন তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম এখানে বসত গড়েন। তার নামেই এই নামকরণ।
প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৪০ সালের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৫০ সালের দিকে জনবসতি গড়ে ওঠে। দ্বীপের মাটি চিকচিকে বালুকাময়, তাই জেলেরা নিজ থেকে নামকরণ করেছে ‘বালুর চর’। দ্বীপটিতে বালুর ঢিবি বা টিলার মতো ছিল বিধায় স্থানীয় লোকজন একে ‘বাইল্যার ডেইল’ বা ‘বাইল্লারচর’ বলেও ডাকত।
কী আছে এই দ্বীপে,বাংলাদেশ বন বিভাগ ‘৭০-এর দশকে নিঝুম দ্বীপে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। দ্বীপটি বর্তমানে হরিণের অভয়ারণ্য। নোনাপানিবেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবি করেন।
হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। শীত মৌসুমে অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ, যাদের উভচর প্রাণী বলা হয়। পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়।
নিঝুম দ্বীপে দুপুরের খাবার শেষে ট্রলার নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে দুটি চর ঘুরে দেখা যায়। চৌধুরী খালের অপরূপ দৃশ্য মোহিত করে ভ্রমনকারীদের।
এখানে গোধূলিলগ্নের কথা স্মৃতি থেকে মুছবে না কখনও। এর পর আবার তীরে ফেরা। সন্ধ্যা যে ঘনিয়ে এলো। রাতের আঁধারে নিঝুম দ্বীপ অনেক বেশি নিশ্চুপ। যদিও স্থানীয় নামার বাজারে গেলে তা বোঝার উপায় নেই।
বাজারে মিষ্টি, চা ও খেজুরের রস পাওযা যায়।বেশিরভাগ ভ্রমনকারী এখানে বারবিকিউর আয়োজন করেন। মাঝে আগুন করে গোল হয়ে সবার আড্ডা দেওয়ার মজাই আলাদা।
অধিকাংশ ভ্রমন পিয়াসুদের আড্ডার মাঝে ফানুস ওড়ায়। এই ফানুস আকাশের সীমানায় গিয়ে মিলিয়ে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা, গান, বারবিকিউ শেষে সবাই তাঁবুতে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
দ্বীপটি যেভাবে বিশেষ পর্যটন জোন হিসেব গড়ে উঠছে,বর্তমানে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা ও নিঝুম দ্বীপকে ঘিরে বিশেষ পর্যটন জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই অঞ্চলে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের সুবিধার্থে সেখানে রেস্তোরাঁ, কটেজ ও ক্রুজ ভেসেল সংগ্রহে প্রায় ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি, নিঝুম দ্বীপ এ দেশের পর্যটন বিস্তারে দারুণ সহায়ক হবে।