চট্টগ্রামের ১১৩ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হবে । খেলা উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলা আজ রোববার শুরু হবে। অবশ্য গত শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তথেকে নানা পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। লালদীঘিসহ আশেপাশের এলাকায় নিয়ে আসা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার ক্রেতাদের মাঝে বেচাকেনা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর বলী খেলা হয়নি। এবার লালদীঘি মাঠ পাওয়া না যাওয়ায় অনিশ্চয়তা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উদ্যোগ নেয়ায় আবারো বলী খেলা শুরু হতে যাচ্ছে । মেয়রের উদ্যোগে লালদীঘি মাঠের পাশে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বরে ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের অস্থায়ী মঞ্চে হবে বলী খেলা। দীর্ঘ বিরতির পর খেলা ও মেলা হওয়ায় বাড়তি উচ্ছাস দেখা যাচ্ছে নগরবাসীর চোখে-মুখে। একইসঙ্গে মেলা শুরু হওয়ায় সাজ সাজ রব পড়েছে লালদীঘিসহ আশেপাশের এলাকায়। এদিকে খেলা ও মেলাকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি। গতকাল দুপুরে কমিটির কার্যালয়ে বলী খেলার ট্রফি এবং খেলোয়াড়দের জার্সি উন্মোচন করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। গতকাল ট্রফি ও জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জব্বারের বলী খেলার সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। বৈশাখী মেলাও মানুষের আকাঙ্খার। এ মেলায় বিভিন্ন দুর্লভ জিনিসপত্র পাওয়া যায়, যেগুলো সারা বছর পাওয়া যায় না। বিক্রেতারা যেমন আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে, ক্রেতারাও থাকে। মেয়র প্রত্যাশা করেন, সুশৃংখলভাবে মেলা ও খেলা সম্পন্ন হবে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী, সদস্য সচিব ও আবদুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল, সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর রুমকি সেন। বলী খেলা প্রসঙ্গে কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ১৫০ জন বলীর নাম তালিকাভুক্ত করব। এর মধ্যে বাছাই করে ১০০ জনকে খেলতে দেব। মানে ৫০ রাউন্ড খেলা হবে। এবার ক্রেস্টের পাশাপাশি বলী খেলার প্রথম পুরস্কার থাকছে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ২য় পুরস্কার ১৫ হাজার টাকা, ৩য় পুরস্কার ৬ হাজার টাকা এবং ৪র্থ পুরস্কার দেয়া হবে ৫ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে কোনো বিক্রেতার কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হবে না। কোনো ব্যবসায়ী যেন চাঁদা পরিশোধ না করে। এ ছাড়া কেউ যেন চাঁদা দাবি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
উল্লেখ্য ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুবক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এই বলী খেলার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলী’। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘কুস্তিু’ বলী খেলা নামে পরিচিত।